সরকার ও দেশ বিরোধী একটি কুচক্রী মহল এবার টার্গেট করেছে একমাত্র রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাদেশ টেলিভশন -বিটিভিকে। এরই অংশ হিসেবে বিটিভির শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি নানা অনুষ্ঠান ও উদ্যোগ নিয়ে মনগড়া মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিটিভির সঙ্গীত অডিশন নিয়ে বিভ্রান্তিকর একটি অডিও ফাঁস এর নামে সোশ্যাল মিডিয়াতে বুস্ট করে বিটিভি, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং সরকারের ইমেজকে কুলষিত করার অপচেষ্টা করেছে মহলটি ।
অথচ কিংবদন্তি, অভিজ্ঞ, গুণী শিল্পীদের দ্বারা অডিশনের মধ্য দিয়ে এসব শিল্পী চূড়ান্ত করা হয়। যেখানে বিটিভি সংশ্লিস্ট কারো মার্কিং এর সুযোগ ছিলনা। অথচ এ নিয়ে কিছু ভুঁইফোড় গণমাধ্যমে মনগড়া সংবাদ প্রচার করে তা বুস্ট করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সাড়ে চার বছর পর হওয়া বিটিভির এই অডিশনকে বিতর্কিত করে শিল্পীসমাজ ও সরকার বিরোধী নানা অপপ্রচারে মেতে উঠেছেন এই সাইবার অপরাধীরা।
সদ্য শেষ হওয়া এবারের অডিশনে বিচারকের দায়িত্বে ছিলেন অধিকাংশ একুশে ও স্বাধীনতা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারপ্রাপ্ত বিচারকমন্ডলী। এদের মধ্যে আধুনিক গানে সুজেয় শ্যাম, শেখ সাদী খান, সৈয়দ আব্দুল হাদী, জিনাত রেহানা, রফিকুল আলম, মকসুদ জামিল মিন্টু, আনিসুর রহমান তনু , খুরশিদ আলম, আবিদা সুলতানা, ফাতেমা তুজ জোহরা, বিনোদ রায়, রোমানা ইসলাম, লিনু বিল্লাহ ও শাহীন সরদার। পল্লীগীতিতে কিরণ চন্দ্র রায়, নাদিরা বেগম, আরামুল ইসলাম, চন্দ্রনা মজুমদার, আবু বকার সিদ্দিক, ফরিদা পারভীন, হাসান মতিউর রহমান , অনিমা মুক্তি গমেজ, আজগর আলীম, দিল আফরোজ রেবা, জহির আলীম, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, সায়মন জাকারিয়া, বিশ্বজিৎ রায় ও কুমার গাঙ্গুলী। নজরুল সঙ্গীতে বিচারক হিসেবে ছিলেন শাহিন সামাদ, সালাউদ্দিন, সুজিত মোস্তফা, ড. হারুন অর রশীদ, নাশিদ কামাল, শাকিল আহমেদ, কল্পনা আনাম, শহীদ কবির পলাশ, বিজন মিস্ত্রী, বিশ্বজিৎ রায়, ফাতেমা তুজ জোহরা, প্রিয়াংকা গোপ , শারমিন সাথী ইসলাম, ইয়াকুব আলী খান ও এম এ মান্নান। রবীন্দ্র সঙ্গীতে সাজেদ আকবর, লিলি ইসলাম, সাদী মুহাম্মদ তকীউল্লাহ, মহিউজ্জামান চৌধুরী, সালমা আকবর, প্রমোদ দত্ত, ফাহিম হোসেন চৌধুরী, বুলবুল ইসলাম, রোকাইয়া হাসিনা, শায়লা তাসমিনা, মুজিবুল কাইউম, মহাদেব ঘোষ, আজিজুর রহমান তুহিন, চঞ্চল খান ও মোঃ গোলাম সরোয়ার।
কিংবদন্তি, অভিজ্ঞ, গুণী শিল্পীদের দ্বারা অডিশনের মধ্য দিয়ে এসব শিল্পী চূড়ান্ত করা হয়
দেশের সংগীতাঙ্গনে বিটিভির এই উদ্যোগকে আশার আলো হিসেবেই দেখছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষেরা। নবীনদের পাশাপাশি অনেক প্রতিষ্ঠিত শিল্পী, সুরকার ও সংগীত পরিচালকও তালিকাভুক্ত হয়েছেন এবারের অডিশনে।
বিটিভির সংগীত অডিশনের বিচারক বরেণ্য শিল্পী কিরণ চন্দ্র রায় বলেন, এতটাই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় বিটিভির যে অডিশন সম্পন্ন হলো তা দেশের অন্যান্য রিয়েলিটি শো আদর্শ বলে আমি মনে করি। আমি মনে করি এ শিল্পীরাই একদিন বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ত্ব করবে। বিশ্বব্যাপী তুলে ধরবে বাংলা গান ও বাংলাদেশকে।
আধুনিক গানের বিচারক আনিসুর রহমান তনু বলেন , আমার মতে এবার যে অডিশন হলো তা সত্যি খুব ভাল একটি অডিশন হয়েছে। ভালো শিল্পী পাওয়া গেছে। তবে অন্যান্য বারের চেয়ে সংখ্যায় বেশি অডিশন হয়েছে বিশেষ করে ঢাকার বাইরের শিল্পী খুব বেশি রকম পাওয়া গেছে। খুব সুন্দরভাবে এতবড় একটা প্লাটফর্মে শিল্পী নেয়া হলো এসব শিল্পীদের এখন উচিত হবে খুব ভালো চর্চা করা। তাতে ভালো শিল্পী হতে সাহায্য করবে।
বিচারক ফরিদা পারভীন বলেন, শিল্পী নিয়োগে আমি কারো তদারকি করতে দেখিনি। ভালো না গাইলে আমি নম্বর দেই নাই। আর একটি কথা হলো, আমি শিল্পী হয়ে শিল্পীদের সাথে প্রতারণ করি নাই।
বিটিভিতে তালিকাভুক্ত হওয়া এ সময়ের জনপ্রিয় শিল্পী নোলক বলেন, আমি সর্বশেষ রাউন্ডে এন্ড্রো কিশোর স্যারের গাওয়া ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’ গানটি গেয়েছিলাম। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা যারা আমাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করেছেন। বিটিভি আমার প্রাণের চ্যানেল এতে তালিকাভুক্ত হয়ে সত্যিই ভীষণ গর্বিত।
তালিকাভুক্ত হওয়া শিল্পী মৌসুমী ইসলাম বলেন, যে বিটিভি দেখে গান শেখা, সেই বিটিভির তালিকাভুক্ত শিল্পী আজ আমি। বিভিন্ন মাধ্যমে গান করার অভিজ্ঞতা থাকলেও অডিশনে এত বড় মাপের মানুষদের সামনে গান করতে কিছুটা নার্ভাস ছিলাম কিন্তু বিচারক প্যানেলে থাকা গুণী মানুষদের এত সহযোগিতা পাবো ভাবতেই পারিনি। দ্বিতীয় রাউন্ডে মনে হয়েছে সবাই কত আপন, একটা পরিবারের মতই মনে হয়েছিল সবাইকে।
এ বিষয়ে বিটিভির প্রোগ্রাম ম্যানেজার (সঙ্গীত) মো. মোল্লা আবু তৌহিদ বলেন, বিটিভি তার জন্মলগ্ন থেকেই সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে জড়িতদের উৎসাহ দিতে কাজ করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সংগীত শিল্পী ও কলা -কুশলী তালিকাভুক্তকরণ কার্যক্রম। বিটিভি শুধু তালিকাভুক্তি করেই তার দায় শেষ করেনি। নবীনদের নিয়ে আয়োজন করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালাও। আমার বিশ্বাস শিল্পী সংকট নিরসনে বিটিভির এ উদ্যোগ কিছুটা হলেও আশার আলো জাগাবে। বিটিভির প্রতি শিল্পী সমাজের যে ভালোবাসা তার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পেয়েছি এবারের অডিশনে। এতটা সাড়া পাবো তা আমরা ভাবিনি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এমন মহতী উদ্যোগে যুক্ত থাকতে পেরে আমিও গর্বিত। গুণী বিচারকমন্ডলী যেভাবে তাঁদের বিচারিক দায়িত্ত্ব পালন করেছেন তাতে আমি বলতে পারি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কাউকেই অবমূল্যায়ন করা হয়নি।
সঙ্গীত অডিশনের অডিও ফাঁস প্রসঙ্গে মো. মোল্লা আবু তৌহিদ বলেন, সুযোগসন্ধানী একটা শ্রেনী সবসময় সরকার ও দেশের ভালো উদ্যোগ ও কাজকে বিতর্কিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেছে নিচ্ছে। অডিশনে বিটিভির পক্ষ থেকে দায়িত্বে থাকা কারও নম্বর প্রদানের সুযোগ ছিলনা অথচ নানা মিথ্যা ও আজগুবি প্রোপাকান্ডচালানো হচ্ছে, জড়িয়ে দেয়া হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম। সেই অডিওতে কোথাও আমার নাম না থাকলেও আমার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, যা আইনগত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এইসব সাইবার ক্রাইমকারীদের বিরুদ্ধে সহসাই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এই অপপ্রচারে বিটিভি সংশ্লিস্ট কেউ জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না। প্রেস বিজ্ঞপ্তি
Leave a Reply